আনোয়ার হোসেন, মণিরামপুর (যশোর) : বিধবা মেয়ে ও এক নাতনিকে নিয়ে কষ্টের সংসার বৃদ্ধা জবেদা বেগমের (৮০)। ভিক্ষা করে পেট চলে তার। ভিক্ষাবৃত্তি সম্মানজনক না হলেও জবেদার বেলায় সেটি ভিন্ন হয়ে উঠেছে। এখন তিনি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন।
ভিক্ষার টাকা জমিয়ে পাড়ার মসজিদে তিনি অনুদান দিয়েছেন ১৩ হাজার টাকা। সেই থেকে গ্রামে আলোচিত তিনি। প্রমাণ করেছেন, দান করতে বিত্তশালী হওয়া লাগে না।
জবেদা বেগম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বাগডাঙা গ্রামের মৃত চিনেতুল্লা বিশ্বাসের স্ত্রী। ২৫ বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান চিনেতুল্লা। বেঁচে থাকতে তিনিও ভিক্ষা করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন তিনি।
বৃদ্ধার পাঁচ মেয়ে, ছেলে নেই। সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। তার চতুর্থ মেয়ে শাহানারা খাতুন স্বামী পরিত্যক্তা হন। নবম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে আফরোজা খাতুনকে নিয়ে আছেন বাপের ভিটেয়। মায়ের সংসারে থেকে জুটমিলে কাজ করেন শাহানারা।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন জবেদা বেগম। এখন আর পাড়া ঘুরতে পারেন না। সপ্তাহে আশপাশের হাটগুলোতে ভিক্ষা করেন। যা পান তা থেকে কোনোরকম পেট চালিয়ে বাকিটা জমিয়ে রাখেন। জমানো টাকা নিজের জন্য খরচ না করে দান করেন মসজিদ, মাদরাসা ও ইসলামি জলসায়।
জবেদা বেগম বলেন, কয়মাস আগে পাড়ার বাগডাঙা মসজিদে ১০ হাজার, বাগডাঙা বাজার মসজিদে এক হাজার, দহকুলা মসজিদে এক হাজার, মাছনা মাদরাসায় এক হাজার ও পাড়ার ঈদগাহের সভায় ৫০০ টাকা দিছি। কোনো কিছু পাওয়ার আশায় না, মন চাইছে তাই দিছি। আমারে আল্লাহ দেবে।
জবেদা বেগমের দানের বিষয়টি আনেকদিন গোপন ছিল। সম্প্রতি 'প্রিয় বাগডাঙা' নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বৃদ্ধার ছবিসহ তার দানের বিষয়ে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। তখন ঘটনাটি জানাজানি হলে আলোচনায় আসেন বৃদ্ধা।
স্বামীর রেখে যাওয়া পাঁচ শতক ভিটের উপরে মাটির ঘরে বসবাস তাদের। বিধবাভাতা ছাড়া সরকারি কোনো সুবিধা পান না তিনি।
জবেদার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে শাহানারার নামে দশ টাকার একটি চালের কার্ড ছিল। একবার চাল তোলার পর স্থানীয় মহিলা মেম্বর লতিফা বেগম নামটি কেটে দিয়েছেন।
স্থানীয় আব্দুর জব্বার জানান, মসজিদ পাকা করার জন্য যখন গ্রামভিত্তিক টাকা তুলছিলাম, তখন জবেদা সহযোগিতার হাত বাড়ান। তিনি নিজে এসে বাগডাঙা মসজিদে ১০ হাজার ও দহকুলা মসজিদে এক হাজার টাকা দিয়ে যান। তা দেখে আমরা উৎসাহিত হই। দ্রুত মসজিদ সংস্কারের কাজ এগিয়ে যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, করোনাকালে একজন ভিক্ষুক টাকা সহযোগিতা করে সরকারি ঘর পেয়েছেন। আমরা চাই, জবেদাও যেন সরকারি সহায়তা পান। তাকে যেন শেষ বয়সে আর ভিক্ষা করতে না হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, তিনি সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য। আমরা চাই তিনি যেন সরকারি ঘর পান।
স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য লতিফা বেগম বলেন, ভিক্ষা করে আত্মারে কিছু দেন না জবেদা। টাকা জমিয়ে বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসায় দান করেন। তার মেয়ের নামে দশ টাকার চালের কার্ড ছিল। পরে ৪০ দিনের কাজে ওর নাম দেওয়ায় চালের কার্ড বাতিল করা হয়েছে।