আনোয়ার হোসেন, মণিরামপুর (যশোর): মাঘের শীত বাঘের গায়ে পুরনো কথাটি সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছে গ্রামগঞ্জে। কয়েকদিনের উষ্ণ আবহাওয়ার পর মাঘ মাসের আগমনের সাথে সাথে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। আর উষ্ঞতা দিতে শীতার্ত মানুষের পাশে কম্বল নিয়ে হাজির হচ্ছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম। ভ্যানে চড়ে করছেন কম্বল বিতরণ। সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্তের পাশাপাশি নিজ অর্থায়নে দুস্থদের কম্বল দিচ্ছেন তিনি।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে নাজমা খানম কম্বল বিতরণ করেছেন উপজেলার মাহমুদকাটি, রঘুনাথপুর ও চাঁদপুর-মাঝিয়ালী গ্রামে। শীতবস্ত্রসহ নাজমা খানমকে কাছে পেয়ে আনন্দিত অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা।
মাহমুদকাটি গ্রামের ভিক্ষুক রাবেয়া বলেন, শীতে খুব কষ্ট। মেম্বর-চেয়ারম্যান আমাগের খবর নেয় না। নাজমা আপা আমারে কম্বল দিছে; আমি খুশি।
শুধু কম্বল বিতরণ নয়, উপজেলার কোনো মানুষের ভোগান্তির কথা শুনলে ছুটে যান নামজা খানম। পাশে বসে দেন সান্ত্বনা; সাধ্যমতো করেন সহযোগিতা। তাছাড়া দুর্ঘটনা বা রোগাক্রান্ত হয়ে কেউ হাসপাতালে ভর্তি থাকলে তার খোঁজখবর নেওয়াসহ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেন। নেতা-কর্মীর মৃত্যুর খবরে ছুটে যান স্বজনহারাদের কাছে। এসব গুণের কারণে মণিরামপুরের জনসাধারণের প্রিয় হয়ে উঠেছেন নাজমা খানম।
মুজিববর্ষে মণিরামপুরে জন্ম নেওয়া নবজাতকদের বাড়িতে উপহারসামগ্রী নিয়ে হাজির এবং নারকেলগাছ রোপণ করে আলোচনায় আসেন নাজমা খানম। করোনাকালে যখন জনপ্রতিনিধিরা ঘরের বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছিলেন, তখন জীবনের মায়া ছেড়ে নিজ অর্থায়নে গৃহবন্দি মানুষের দ্বারে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি। নিজ খরচে মণিরামপুর হাসপাতালে স্থাপন করেছিলেন জীবাণুনাশক স্প্রে।
সম্প্রতি নাজমা খানমের সেবামূলক কাজে কিছুটা ভাটা পড়েছে। নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কারটি বিকল হয়ে গ্যারেজে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। গাড়িটি কাছে না থাকায় তিনি ছুটতে পারছেন না মানুষের দ্বারে। রাজস্বখাত থেকে গাড়ি মেরামতের জন্য বছরে একলাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা পাচ্ছেন না।
ইউএনও সৈয়দ জাকির হাসান তাকে প্রাপ্য টাকা না দেওয়ায় গাড়ি মেরামত করতে পারছেন না বলে অভিযোগ নাজমা খানমের।
নাজমা খানম বলেন, আমি এক লাখ টাকার বিলভাউচার জমা দিয়েছি। ইউএনও ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বাকিটা আটকে রেখেছেন।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ৫০ হাজার টাকার বিল-ভাউচার দিয়েছেন। তাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা পাইতে গেলে পরিষদের সভায় সেটা পাশ করাতে হবে।
যদিও উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি মেরামতের টাকার ব্যাপারে পরিষদের সভায় অনুমোদনের জন্য আইনে কিছু বলা নেই, দাবি নাজমা খানমের।
নাজমা খানম বলেন, সরকারিভাবে ১০০ কম্বল পেয়েছি। আমি নিজখরচে ২০০ কম্বল বিতরণ করেছি। কম্বল বিতরণের কাজ অব্যাহত আছে।
নাজমা খানম খুলনা বিভাগের প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান। গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হন। এরআগে টানা দুইবার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।