রহিদুল ইসলাম খান, চৌগাছা (যশোর): প্রেমবালা একদম নির্বাক হয়ে গেছেন। আকস্মিক স্বামী ও সন্তান হারিয়ে কথা বেরুচ্ছে না তার মুখ দিয়ে।
সোমবার সেপটিক ট্যাংক পরিস্কার করতে গিয়ে প্রথমে মারা যান তার স্বামী মধু মঙ্গল, এরপর বাবাকে উদ্ধার করতে গিয়ে মারা যান ছেলে সাগর মঙ্গলও।
পরিবারে উপার্জনক্ষম স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রেমবালা। অপরদিকে, রয়েছে বিভিন্ন এনজিওর তিন লাখ টাকার বেশি ঋণের বোঝা।
প্রেমবালার সংসারে রয়েছেন তার অসুস্থ শাশুড়ি, ছোট ছেলে প্রতিবন্ধী সনাতন, এক মেয়ে কাকলীবালা, সাগরের স্ত্রী সুমতিবালা ও তার তিন বছর বয়সী সন্তান।
স্বামী ও সন্তানের অকাল মৃত্যুতে কীভাবে চলবে সংসার- তা জানেন না এই নারী। এখন তার দু'চোখ দিয়ে ঝরছে অঝোর ধারায় অশ্রু।
সোমবার (১৬ আগস্ট) সেপটিক ট্যাংকে নেমে প্রেমবালার স্বামী ও ছেলের একসাথে করুণ মৃত্যু হয়। তারা চৌগাছার কয়ারপাড়া গ্রামের ঋষিপাড়ার বাসিন্দা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে জানা যায়, মধু মঙ্গল মাত্র আড়াই শতক জমির ওপরে টিনের একটি ঝুপড়িতে থাকতেন পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে। ঝুপড়ির মধ্যে বাসন, আসবাবপত্র, পোশাক দেখা না গেলেও এনজিওর কিস্তির বইগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
মধু ও তার ছেলে সাগর ভ্যান চালাতেন। মাঝে মধ্যে পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেন। সম্প্রতি লকডাউনে ঘরে জমানো যা ছিল সব শেষ হয়ে যায়। একমুঠো চালও নেই- জানালেন সাগরের স্ত্রী সুমতিবালা।
তিনি জানান, ঘরে খাবার না থাকায় সোমবার সকালে শ্বশুর কাজে যান না খেয়েই। যাওয়ার সময় বলে যান, অল্প সময়ের কাজ। খুব শিগগিরই বাড়িতে ফিরে আসবেন। কাজটা করলে বেশ টাকা পাওয়া যাবে। দুই তিনটা ঋণের কিস্তি শোধ হবে।
ঝুপড়ির মধ্যে যেসব ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের বই পাওয়া যায় সেগুলো হলো, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি., একটি বাড়ি একটি খামার, শক্তি ফাউন্ডেশন, আদ-দ্বীন, সিএসএস, আশা, আরআরএফ, সূর্যমুখী ইত্যাদি।
প্রেমবালা জানান, ওগুলো ছাড়া আরো কয়েকটি ঋণের বই রয়েছে, যা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের সদস্যরা জানান, মৃত মধু ও তার ছেলে সাগরের নামে তিন লাখেরও বেশি টাকা ঋণ নেওয়া আছে।
প্রেমবালা বলেন, ‘নিজেদের কথা বাদ দিলাম, তিনবছরের শিশুর খাবার আর অসুস্থ শাশুড়ির ওষুধ কেনার টাকা, তার ওপরে এনজিও ঋণের কিস্তি!’
এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার সন্ধ্যায় মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে প্রতিবেশিদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় উপজেলার মুনিখালি শ্মশানে সৎকার করা হয় বাপ-বেটাকে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি এবং থানায় অপমৃত্যুর মামলাও নথিভুক্ত করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ।